হ্যাক হলো হোয়াটসঅ্যাপ! কি করবেন ব্যবহারকারীরা?
Tuesday, May 14 2019the guardian
Ad
স্মার্টফোনের হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপলিকেশানটি অবিলম্বে আপডেট করার অনুরোধ জানিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপে এক গুরুতর নিরাপত্তা ত্রুটি ধরা পড়ে যার ফলে এই জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপ ইনস্টলকৃত মোবাইলের সকল তথ্য এবং নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে পারে তৃতীয় পক্ষের হাতে।
আসলে কি হয়েছে?
ফেসবুকের মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপে একটি নিরাপত্তা দুর্বলতা রয়েছে যেটি কাজে লাগিয়ে শুধুমাত্র একটি ইনকামিং কলের মাধ্যমে মোবাইলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে হ্যাকাররা। আর মোবাইলে আসা এ দূরভিসন্ধিমূলক কলটি এমনকি রিসিভ না করলেও সক্রিয় হওয়ার ক্ষমতা রাখে শক্তিশালী এ ভাইরাসটি। এই কলের মাধ্যমে হ্যাকাররা আপনার মোবাইলে স্পাইওয়্যার নামক একটি অ্যাপ্লিকেশান ইন্সটল করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। স্পাইওয়্যার এমন একটি অ্যাপ যা আপনার ফোনের কল থেকে বা মেসেজ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম এবং যে কোনো সময় আপনার ফোনের ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন চালু করে এদের মাধ্যমে অন্যান্য কাজ যেমন রেকোর্ডিং, ছবি তোলা, এমনকি ভিডিও করতেও সক্ষম।
কোন কোন ফোন এর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে?
ফেসবুকের এক জরিপ অনুযায়ী , সকল ব্র্যান্ডের ফোন যাতে হোয়াটসঅ্যাপ ইন্সটল করা আছে- এই হ্যাকিং এর স্বীকার হয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অ্যাপলের আইফোন, এন্ড্রয়েড ফোন, উইন্ডোজ ফোন এবং টিজেন ডিভাইস।
এই হ্যাকিং আক্রমনের পিছনে কারা জড়িত?
ফাইনান্সিয়াল টাইমস এর ভাষ্যমতে , ইজরাইয়েলি সাইবার গোয়েন্দা সংস্থা এনএসও স্পাইওয়্যার অ্যাপটি তৈরী করেছে। তাদের ভাষ্যমতে, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের কলটি রিসিভ ও করতে হয়নি এবং কলটি ফোনের লগ থেকে লুকোনো ছিল তাই সাধারন ব্যবহারকারীরা বুঝে উঠার আগেই হ্যাক হয়ে গিয়েছে তাদের মোবাইল।
আপনিও কি এর দ্বারা আক্রান্ত?
কারা বা কয়জন এর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে এর সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায় নি। তবে, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের একজন আইনজীবী এবং অ্যামনেস্টির একজন আন্তর্জাতিক গবেষক এই হ্যাকিং এর স্বীকার হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। যদি আপনি কোনো অপরিচিত নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস কল না পেয়ে থাকেন অথবা আপনি অপিরিচিত নাম্বার থেকে পাওয়া কল ধরেন নি তাহলে তাহলে ধারনা করা যেতে পারে আপনাকে এই হ্যাকিংএর একজন লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত করা হয় নি। কিন্তু যদি আপনি আপনি একজন আইনজীবী হন কিংবা কোনো সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানের কাজের সাথে যুক্ত আছেন এবং আপনি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যাবহার করেন , তাহলে আপনাকে অবশ্যই বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
নিজেকে রক্ষা করতে আপনার কি করনীয় ?
ফেসবুক তার হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের রক্ষা করতে একটি সার্ভার-সাইড পরিবর্তন এনেছে যার মাধ্যমে ফেসবুক বিভিন্ন স্মার্টফোনে ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপের ভিন্ন ভিন্ন ভার্সনের আপডেট গুলো সরিয়ে দিয়েছে এবং ব্যবহারকারীদের তাদের নিজস্ব অ্যাপস্টোরে হোয়াটসঅ্যাপের আপডেট সম্পর্কে নিজ থেকে খোঁজ নিতে এবং আপডেট গুলো পরীক্ষা করতে পরামর্শ দিয়েছে। আর যে এ পরামর্শ অনুসরণ করতে ব্যার্থ হবে সে নিজের ফোন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ আনইন্সটল করার মাধ্যমে নিজেকে এই হ্যাকিং থেকে রক্ষা করতে পারবে।
Ad
আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনি অ্যাপের সর্বশেষ সংস্করণ ব্যবহার করছেন?
হোয়াটসঅ্যাপ তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে তার অ্যান্ড্রোয়েড অ্যাপের সংস্করণ গুলোর তালিকা রাখে! আপনি আপনার মোবাইল ফোনের অ্যাপের আইকনে যদি দীর্ঘক্ষন চেপে রাখেন তাহলে আপনি আপনার অ্যাপের সম্পর্কে সব তথ্য দেখতে পাবেন এবং সেখানে আপনি আপনার সংস্করণ নাম্বার পাবেন যেটা পরবর্তীতে আপনি তাদের ওয়েব সাইটের সংস্করণ নাম্বারের সাথে মিলিয়ে দেখে বুঝতে পারবেন আপনার অ্যাপটি সংস্করণ সর্বশেষ সংস্করণ কি না ! তবে আরেকটি সহজ পদ্ধতি হলো যদি আপনার মোবাইলের বিল্ট-ইন অ্যাপস্টোর থেকে সকল অ্যাপের আপডেট গুলো নিয়মিত ইন্সটল করে থাকেন তাহলে আপনি সহজেই নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনার সংস্করণটি সর্বশেষ এবং যাচাইকৃত।
আমার ফোন সম্পর্কে করনীয় কি?
অ্যাপস গুলো আপ টু ডেট রাখা হ্যাকিং এবং ডাটা চুরি রোধ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় , তবে ফোনের অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে ভুলে গেলেও চলবে না ,আপনাকে সবসময় অপারেটিং সিস্টেমের সর্বশেষ সংস্করণ ইন্সটল করে রাখতে হবে এবং আপনাকে অবশ্যই সফটওয়্যার আপডেট সমর্থন করে না এমন ফোন ব্যবহার করার আগে বার বার ভেবে দেখা উচিত। প্রায় সকল আইফোন ৫ বছরের বেশী সফটওয়্যার আপডেট পায় আর এন্ড্রোয়েডের টা তার প্রস্তুতকারকের উপর নির্ভর করে এবং গুগল পিক্সেলের ক্ষেত্রে সময়টা হলো ৩ বছরের মাসিক নিরাপত্তা আপডেট।
সফটওয়্যার সাপোর্ট কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
আপনার ফোনের সফটওয়্যার যত পুরোনো তত এটা সাইবার অপরাধীদের আক্রমনের ঝুকিপূর্ণ। সফটওয়্যার যত পুরোনো হতে থাকে মোবাইলের নিরাপত্তা দূর্বলতাগুলো তত আবিষ্কার হতে থাকে এবং হ্যাকারের জন্য তত সহজ হতে থাকে আপনাকে হ্যাক করা। যদিও সফটওয়্যারের সকল দূর্বলতাগুলো সফটওয়্যার প্রস্তুতকারকদের দ্বারা সংশোধন করা হয় তবে আপনাকে এটি পেতে হলে অবশ্যই সাপোর্টের সাথে যুক্ত থাকতে হবে এবং আপডেট গুলো গ্রহন করতে হবে। বেশিরভাগ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যদি কখনো কোনো সমস্যা হয় আপনার সমস্যাটির সমাধান করার জন্য আপনি কিছুই করতে পারবেন না, যার অর্থ আপনি আপনার ডিভাইসের নির্মাতার কাছ থেকে প্রাপ্ত সফটওয়্যার সাপোর্টের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল।
আপনার কম্পিউটার সম্পর্কে কি করনীয়?
আপনার ডেস্কটপ, ল্যাপটপ বা ট্যাবলেট কম্পিউটার আপ টু ডেট রাখা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কম্পিউটারের জন্য সফটওয়্যার সাপোর্ট সাধারণত স্মার্টফোনের চেয়ে অনেক জরুরি। যদিও উইন্ডোজ বা ম্যাক ওএস এর প্রতিনিয়ত আপডেট বিরক্তিকর মনে হতে পারে, তবে তারা আপনার নিরাপত্তার জন্য গুরুত্ত্বপূর্ণ তাই আপনাকে অবশ্যই ডিভাইসগুলো আপ টু ডেট রাখতে হবে । রাস্তায় নিরাপদ রাখার জন্য আপনার গাড়ীতে যেমন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা ভালো,তেমনি আপনার কম্পিউটার, ফোন বা অন্যান্য ইন্টারনেট সংযুক্ত ডিভাইসগুলিকে সুরক্ষিত রাখতে ঠিক একই যত্নের প্রয়োজন আর তা সম্ভব হবে সফটওয়্যার গুলো নিয়মিত আপডেট করার মাধ্যমে।